সারা দেশ
Hits: 596
তার নাম জাইন সিদ্দিকী। নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের হোয়াইট হাউস প্রশাসনে প্রথম বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত আমেরিকানকে একটি গুরুত্বপূর্ন পদে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। তাঁর পৈতৃক বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল উপজেলাধীন শেরপুর ইউনিয়ন এলাকার মাদারিনগর নামক গ্রামে। হোয়াইট হাউজে এত বড় গুরুত্বপূর্ণ পদে তাঁর নিয়োগের খবরটি গ্রামের মানুষের মধ্যে আনন্দের ব’ন্যার সৃষ্টি করেছে। বছর চারেক পূর্বে, ২০১৬ এর এপ্রিল মাসের দিকে তিনি বাবার সাথে তার গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে আসেন। সবাই বলেন, জাইন সিদ্দিকী শুধুমাত্র নান্দাইলবাসীর জন্য গর্ব নয়, ময়মনসিংহ বাসীর জন্য গর্ব, বাংলাদেশের গর্ব।
গত বুধবার, রাষ্ট্রপতি জো বাইডেন এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস হোয়াইট হাউসের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদের কর্মকর্তাদের নাম ঘোষণা করেছেন; ৩০ বছরের জাইন সিদ্দিকীকে ডেপুটি চিফ অফ স্টাফের সিনিয়র উপদেষ্টা নিযুক্ত করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতি বাইডেন আগামী বুধবার সেখানকার সরকারের দায়িত্ব নেবেন।
বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পরে দূর-দূরান্ত থেকে স্বজনরা ছুটে আসেন জাইনদের গ্রামের বাড়িতে। তার জন্য শুভকামনা কামনা করে গ্রামের মসজিদে নামাজ অনুষ্ঠিত হয় এবং মিষ্টি বিতরণ করা হয়।
নান্দাইলের ১০ নম্বর শেরপুর ইউনিয়নের মাদারীনগর গ্রামের মোস্তাক আহম্মেদ সিদ্দিকী ওরফে মামুন ও হেলেনা সিদ্দিকী দম্পতির একমাত্র ছেলে জাইন সিদ্দিকী। জাইনের দাদা মৃ’/ত আবু বকর সিদ্দিকী। মা ঢাকার মেয়ে। মা-বাবা দুজনই চিকিৎসক। ৩২-৩৩ বছর আগে তাঁরা পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানেই নাগরিকত্ব পেয়ে বসবাস করছেন। সেখানেই জন্ম জাইনের। তাঁদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন দাদি মাজেদা আক্তারও।
গত শনিবার নান্দাইল সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দক্ষিণে মাদারীনগর গ্রামে গিয়ে জানা যায়, জাইনদের বাড়িটিকে সবাই চেনে মজিদ মাস্টারের বাড়ি হিসেবে। নরসুন্দা নদীর পারঘেঁষা ওই বাড়ির আরেকটি পরিচিতি রয়েছে, তা হলো বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদের ছোট ভাই আবদুল হাইয়ের শ্বশুরবাড়ি এটি। আবদুল হাইয়ের সঙ্গে বিয়ে হয় ওই বাড়ির মৃ’/ত আবু বকর সিদ্দিকীর মেয়ের অর্থাৎ জাইনের ফুফু নাহিদ পারভীন মনির। স্বামীর মৃ’/ত্যু’র পর মনি প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদের ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। পাঁচ ভাই ও তিন বোনের মধ্যে জাইনের বাবা সবার বড়।
বর্তমানে গ্রামের বাড়িতে জাইনের বাবা-ফুফুরা কেউ বসবাস না করলেও বাবার চাচাতো ভাইয়েরা বসবাস করেন। তাঁদের একজন রতন সিদ্দিকী। তিনি গনমাধ্যমকে জানান, জাইনের বাবা টেলিফোন করে ছেলের জো বাইডেন প্রশাসনে গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ পাওয়ার খবর জানিয়েছেন। পদটি কী, তা না বুঝলেও তাঁরা এটা বুঝতে পেরেছেন, বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষ’/ম’তাশালী দেশের প্রেসিডেন্টের প্রশা’সনে দায়িত্ব পাওয়া অনেক বড় গর্বের, অনেক সম্মানের।
জাইন সিদ্দিকীর আরেক চাচা বাক্কী মিয়া জানান, চার বছর আগে জাইনকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন মোস্তাক আহম্মেদ সিদ্দিকী। তাঁরা বাড়িতে এক দিন ছিলেন। পুরো গ্রাম ঘুরে বেড়িয়েছেন। এরপর কিশোরগঞ্জ যান আরেক আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে।
জাইনের তিন চাচি বিমলা, লুৎফুন্নাহার ও হেলেনা খাতুন জানান, শেষবার বাবার সঙ্গে জাইন যখন বাড়িতে আসেন, আধাপাকা টিনশেড ঘরে রাত যাপন করেছেন সাদাসিধাভাবে। তখন নিজেরাই (চাচি) রান্না করে তাঁদের খাইয়েছেন। খেয়েছেন টাকি মাছের ভর্তা, লাউ শাক, ছোট মাছ, দেশি মুরগি ও মাষকলাইয়ের ডাল। এ ছাড়া নানা ধরনের পিঠাপুলিও খেয়েছেন। বাড়ির পাশের নরসুন্দা নদীতে চড়েছেন নৌকায়। এর আগেও আরো দুইবার বাবা, মা ও দাদির সঙ্গে গ্রামের বাড়ি বেড়াতে আসেন জাইন।
বাড়িটির সামনে রয়েছে একটি মাদরাসা। মাদরাসাটি জাইনের চাচা মাহবুব সিদ্দিকীর নামে। প্রতিষ্ঠা করেছেন দাদা আবু বক্কর সিদ্দিকী। এই মাদরাসার প্রধান মো. আল আমিন জানান, জাইন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের ডেপুটি চিফ অব স্টাফের সিনিয়র অ্যাডভাইজার হয়েছেন, এই খবর তাঁর বাবা টেলিফোনে জানানোর পর গত শুক্রবার জুমার নামাজের পর মসজিদে মিলাদ পড়িয়ে মুসল্লিসহ গ্রামের মানুষকে মিষ্টিমুখ করানো হয়েছে।
জানতে চাইলে জাইনের ফুফু নাহিদ পারভীন মনি গনমাধ্যমকে বলেন, ’জাইন যুক্তরাষ্ট্রে এত বড় একটি পদে নিয়োগ পাওয়ায় আমরা সবাই খুব আনন্দিত।’ মনি জানান, পাঁচ ভাই ও তিন বোনের মধ্যে সবার বড় জাইনের বাবা, থাকেন নিউ ইয়র্কে। তাঁদের এক ভাই মা’/রা গেছেন। অন্যরা কানাডার মন্ট্রিয়লে বসবাস করেন।
জাইনের বাবা মোস্তাক আহম্মেদ সিদ্দিকীকে টেলিফোন করলে তিনি গনমাধ্যমকে বলেন, ’হোয়াইট হাউসের গুরুত্বপূর্ণ পদে জাইন নিয়োগ পেয়েছে তার নিজের যোগ্যতায়। এত বড় একটি পদে তার নিয়োগ পাওয়াটা একজন বাংলাদেশি হিসেবে আমাদের যেমন গর্বের, তেমনি ময়মনসিংহের মানুষের, নান্দাইলের মানুষের পাশাপাশি দেশের সব মানুষেরইও গর্বের। সবাই তার জন্য দোয়া করবেন, যেন সে তার দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করে দেশের সম্মান আরো বাড়াতে পারে।’
জাইন সিদ্দিকী বড় হয়েছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে। প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইয়েল আইন স্কুলের স্নাতক, জাইন বর্তমানে বাইডেন-কমলা ট্রান্সজিশন দলের অভ্যন্তরীণ এবং অর্থনৈতিক দলের চিফ অফ স্টাফ হিসাবে দায়িত্বরত আছেন। তিনি গেল বছর কমলা হ্যারিসের ভাইস প্রেসিডেন্সিয়াল বি’ত/র্ক প্রস্তুতি দলের একজন গুরুত্বপূর্ন সদস্য ছিলেন। এর পূর্বে, তিনি বেটো ও’রোরর্কের প্রেসিডেন্সিয়াল ক্যাম্পেইনের ডেপুটি পলিসি ডিরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি সিনেট ক্যাম্পেইন দলের সিনিয়র নীতি উপদেষ্টার দায়িত্বও পালন করেছেন। জাইন মার্কিন সুপ্রিম কোর্টের জজ এলেনা কাগান, ডিসি সার্কিট কোর্টের আপিলের জজ ডেভিড ট্যাটল এবং সেন্ট্রাল ডিস্ট্রিক্ট ক্যালিফোর্নিয়ার জজ ডিন প্রাগের অধীনেও আইনকর্মী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।